রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

সাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণের স্বপ্ন ইফাজের

কুমিল্লা প্রতিনিধি

সাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণের স্বপ্ন ইফাজের

ছোটবেলা থেকে আব্বুর সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর অনেক গল্প শুনেছি।  তিনি টানা ৭২ ঘণ্টাও সাইকেল চালিয়েছেন। আব্বুর এমন গল্পগুলো আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। যখন আমি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছি, তখন থেকেই আমার একমাত্র বাহন বাইসাইকেল। আমার ইচ্ছেহতো সাইকেল নিয়ে দূরদূরান্তে হারিয়ে যাই। 

ছোট বেলা থেকে সাইকেল নিয়ে আমার পাগলামি শুরু। একবার পাগলামি এমন পর্যায়ে চলে এসেছিল যে, আমাকে আমার পরিবার মাদকাসক্ত মনে করে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে দিয়ে আসে। তবুও আমি দমে যাইনি।  সাইকেল চালিয়েছি। শুধু আমার দেশেই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সীমান্ত জেলাগুলো ঘুরেছি। দেখেছি তাদের বৈচিত্র্যময় জীবন। এভাবে সাইকেলে চড়েছি প্রায় এক লাখ কিলোমিটার। এখন আমার স্বপ্ন সাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণ করা। 

সাইকেল ভ্রমণ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এভাবেই অনুভূতি ব্যক্ত করেন মাহমুদুল হাসান ইফাজ। ইফাজ কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া গ্রামের সন্তান। তার বাবা গোলাম মোস্তফা একটি হজ ট্রাভেল এজেন্সির গাইড হিসেবে নিয়োজিত। দুই ভাইয়ের মধ্যে ইফাজ ছোট। বড় ভাই ইথার একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে সেখানে সময় দেন।  হোটেল ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা করা ইফাজের সব স্বপ্ন সাইক্লিং নিয়ে। 

ইফাজের বর্ণনায় উঠে আসে তার সাইক্লিং জীবনের কথা। প্রায় এক লাখ কিলোমিটার সাইকেলে চড়েছেন। জিপিএস ট্র্যাকিং অ্যাপ স্ট্রাভাতে রেকর্ড আছে ৬২ হাজার কিমি সাইকেলে ঘুরে বেড়ানোর তথ্য। বাকি তথ্যগুলো গুগল ড্রাইভে সেভ করে রেখেছেন। সাইকেলের এমন নেশায় ভয়ঙ্কর সব কাজ করেছেন ইফাজ। সেগুলো বর্ণনা ছিল লোমহর্ষক। 

২০১৪ সালের ঘটনা। ভারতের কলকাতা থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি সাইকেল র্যালি হবে। এমন তথ্য শুনেই ইফাজ রওনা করলেন একটি ফনিক্স সাইকেল নিয়ে। তার ভিসা-পাসপোর্ট নেই। তবুও ওই র্যালিতে অংশগ্রহণ করবেন। বাড়ি থেকে টানা দুদিন সাইকেলে চড়ে বেনাপোল বন্দরে উপস্থিত হন। তবে পাসপোর্ট-ভিসা না থাকায় বন্দর দিয়ে ওপাড়ে যাওয়া সম্ভব  হয়নি। তাই সাইকেল কাঁধে নিয়ে নদী সাঁতরে ভারতে যান। তবে নদীর চরে ডাকাতের কবলে পড়েন। সে সময় বহু কষ্টে রক্ষা পান। 

ভারতে সাইকেল র্যালির যারা আয়োজন করেছেন, তারা ইফাজের মুখে বাংলাদেশ থেকে কলকাতা ভ্রমণের গল্প শুনে খুবই অবাক হন। একটা ছেলের সাইকেল নিয়ে এমন প্যাশন আজকাল খুব একটা দেখা যায় না। সেবার ইফাজ ভালোভাবে সাইকেল র্যালি সম্পন্ন করে বাড়ি ফিরে আসেন। 

গেল মাসেই ইফাজের সাইকেলটি চুরি হয়ে যায়। এতে মন খারাপ হয় তার। বেশ কিছুদিন হেঁটে বাড়ি থেকে আসা-যাওয়া করেন। সাইকেল চুরির ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে জেনে ইফাজকে সান্ত্বনা দেন।  পরে সাইক্লিস্টরা চোরকে শনাক্ত করে সাইকেলটি উদ্ধার করতে সমর্থ হন। সাইকেল নিয়ে ইফাজের এমন বহু ঘটনা আছে। সেসব বাদে ইফাজ বড় করে দেখেন তার সাইকেল নিয়ে চড়ে বেড়ানোর কথা। 

ইফাজ জানান, একদিনে তিনি টিম বিডিসির সঙ্গে বিরতিহীন ৫০০ কিলোমিটার সাইকেলে ভ্রমণ করেছেন। ঢাকা থেকে তার যাত্রা শুরু হয়। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থেকে শেরপুর, তারপর কিশোরগঞ্জ, পরে আবার ময়মনসিংহের ভালুকায় ফিরে আসেন। বিরতিহীন এমন সাইক্লিং বাংলাদেশে খুব একটা হয় না বলেও জানান ইফাজ।

ইফাজ বাংলাদেশের সবকটি জেলাতেই ঘুরেছেন। তার সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি শতবর্ষী বৃক্ষ রক্ষা, ইয়ুথ এগেইনেস্ট ড্রাগ এ দুটি ম্যাসেজ পৌঁছে দেন। এভাবে সাইক্লিং করতে গিয়ে ২০১২ সালে যোগ দেন বিডি সাইক্লিস্ট গ্রুপের সঙ্গে। পরে তার সাংগঠনিক দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার কারণে স্থানীয় কমিউনিটি সংগঠন কুমিল্লা সাইক্লিস্ট গ্রুপের অ্যাডমিনের দায়িত্ব পালন করছেন । 

ইফাজ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। যার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন-পরিবেশ রক্ষণ নিয়ে সচেতনতা প্রচার, বৃক্ষরোপণ ও রক্তদান উল্লেখযোগ্য। 

টিএইচ